রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ নারীকে এখন ঘরে-বাইরে দুই-ই সামলাতে হয়। কর্মজীবী নারীদের প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটা ধরে ছুটতে হয় কর্মস্থলে। এর বাইরেও নানা কাজে নারীকে ঘরের বাইরে আসতে হয়। চলতে হয় সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। এমনই বাস্তবতায় বিশেষত রাজধানী ঢাকায় নারীকে যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে নির্ভর করতে হয় গণপরিবহনের ওপর। কিন্তু তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট করে সেভাবে গণপরিবহনের ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে নানা আলোচনা আর উদ্যোগের পরও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
ঢাকা শহরে সরকারিভাবে নারীদের জন্য নির্ধারিত গণপরিহনের সংখ্যা কাগজে-কলমে ২২টি। তবে তার মধ্যে বর্তমানে চালু আছে মাত্র চারটি। আর বেসরকারি উদ্যোগে নারীদের জন্য কোনো পরিবহনই নেই রাজধানীতে। এ অবস্থায় পুরুষদের সঙ্গে গণপরিবহনে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত নারীকে বিড়ম্বনা আর শতেক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। রেহাই মিলছে না যৌন হয়রানি থেকেও।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় দেশের ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। এর মধ্যে আবার বেশি হয়রানি হতে হয় ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারা। বেসরকারি সংগঠন অ্যাকশনএইডের এক জরিপে দেখা গেছে, বড় শহরগুলোতে বাসে পুরুষ যাত্রীদের মাধ্যমে ৪২ শতাংশ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে ৫৩ শতাংশ নারী যাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন।
নানামুখী হয়রানির কথা চিন্তা করে রাজধানীতে নারী যাত্রীদের জন্য পৃথক গণপরিবহন চালু করা হয় ২০১০ সালে। তাঁদের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ২২টি বাস চালু করে। তবে করোনা মহামারির কারণে সেসব বাস বন্ধ হয়ে যায়। জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও সেই বাসগুলো এখনো স্থবির। বর্তমানে নারীদের জন্য মাত্র চারটি বাস চালু রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, স্কুল-কলেজ খুললেই বাকি ১৮টি বাস নারীদের জন্য চালু করা হবে। এ অবস্থায় শতেক ভোগান্তি মেনেই নারীদের নগরের পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
উত্তরার বাসিন্দা লায়লা বানু বললেন, ‘রোজ যুদ্ধ করে অফিসে যাই। ভিড়ের মধ্যে কিছু মানুষ ইনটেনশনালি গায়ে হাত দেয়। অনেক সময় নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন পুরুষ যাত্রী দখল করে রাখে। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডাও হয়। আমি চাই বিআরটিসি নারী বাসের সংখ্যা বাড়াক।’
মেহেরুন নেসা নামে এক শিক্ষিকা বললেন, অনেক দিনই ভিড়ের কারণে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়ে বাসে উঠতে পারি না। আবার অনেক বাস নারী যাত্রী তুলতে চায় না। এসব কারণে কর্মস্থলে যাওয়া ও বাসায় ফিরতে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। ভোগান্তি তো আছেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে বিআরটিসির জেনারেল ম্যানেজার (হিসাব) আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বিআরটিসির নারী বাসের সংখ্যা না বাড়ার বড় একটি কারণ হচ্ছে—খরচ পোষানো যায় না। অনেক সময় তেলের খরচটাই ওঠে না। স্কুল, মহিলা এবং সার্কুলার সার্ভিস একটাও লাভজনক না। অফিস শুরু ও শেষের সময় ছাড়া পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যায় না। তবে যেসব রুটে রেভিনিউ ভালো আসবে সেগুলোতে আমরা বাস পরিচালনার জন্য তৎপর রয়েছি। কোনো এলাকায় মহিলা যাত্রী বাড়ার তথ্য পেলে আমরা সেখানে সার্ভে করি এবং বাস দিয়ে দিই।’
বিআরটিসির পাশাপাশি ২০১৮ সালে পরিবহন সংস্থা দোলনচাঁপা মিরপুর-১২ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রথম বেসরকারিভাবে নারীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু করে। বাংলাদেশের র্যাংগস গ্রুপ এবং ভারতীয় ভলভো আইশার ভেহিকল লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে ‘দোলনচাঁপা’ এসি বাস সার্ভিসটির উদ্বোধন করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২০১৯ সালে ‘দোলনচাঁপা’ বাসের সংখ্যা দাঁড়ায় চারটিতে। কর্তৃপক্ষ তখন বলেছিল, ধীরে ধীরে বাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। তবে বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। রাজধানীতে ‘দোলনচাঁপা’ বাস এখন ডুমুরের ফুল। কবে থেকে কেন এই বাস বন্ধ হয়ে গেছে সে সম্পর্কে কেউ জানে না। কথা বলার জন্য পাওয়া যায়নি কোনো কর্তৃপক্ষকেও।সুত্র,কালের কন্ঠ
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমরা সব সময়ই নারী যাত্রীদের অধিকার, তাদের জন্য আলাদা বাস এবং তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার বিষয়ে সোচ্চার। আমরা সব সময় চেষ্টা করি এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের এবং পরিবহন মালিকদের চাপে রাখার। কিন্তু আমাদের গণপরিবহন সেক্টরটা আসলেই নারীবান্ধব নয়। সাধারণ যাত্রীরাই গণপরিবহনে অসহায়। সেখানে নারীদের অবস্থা তো আরো করুণ।
Leave a Reply